ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাজিরা থানার ওসির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা : পিস্তল বের করে হত্যার হুমকি

শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৮-আগস্ট) দুপুর অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে জাজিরা থানার সামনে এই ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে চলমান পুলিশের কর্মবিরতির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন জাজিরা থানার পুলিশ সদস্যরা। কর্মসূচির সংবাদ প্রচারের জন্য স্থানীয় প্রেসক্লাব ও রিপোর্টাস ইউনিটিসহ অন্যান্য সংবাদকর্মীরা সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান।
এক পর্যায়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে তাদের ওপর হামলার হুকুম দেন পুলিশ সদস্যের। এরপর পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হওয়ার পাশাপাশি দৈনিক আমার সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি হিমেল আহমেদ অপি গুরুতর আহত হয়।
এসময় দৈনিক যায়যায়দিনের সাংবাদিক ইমরান হোসাইনকে পিস্তল বের হত্যার হুমকি প্রদান করেন ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সাংবাদিকরা সেখান থেকে জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদে চলে যান। গুরুতর আহত হিমেল আহমেদ অপিকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। অন্যদিকে ইমরানসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা নিরাপদে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বর্তমানে জাজিরার সাংবাদিকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এঘটনার সময় সাংবাদিক হিমেল আহমেদ অপি ফেসবুকে এক ভিডিওতে রক্তাক্ত অবস্থায় বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাংবাদিকরা পূর্ণ সমর্থন দিয়ে সংবাদ প্রচারণাসহ আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করায় আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করেছে।
হামলায় আহত সাংবাদিক ইমরান হোসাইন বলেন, আমরা উপজেলায় আইনশৃংখলা মিটিংয়ে ছিলাম। তখন শুনতে পারি জাজিরা থানা পুলিশ বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে নিউজ করার জন্য থানায় যাই। গিয়ে যানতে পারি ওসি আমাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য ও গালাগাল করছেন। বিষয়টি আমি ওসিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের চার পাঁচজন সাংবাদিক আহত হয়। আমি এই হামলার বিচার চাই।
অভিযুক্ত জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। এটার জন্য আমরা দুঃখিত এবং লজ্জিত।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানান।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শরীয়তপুরের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম বলেন, জাজিরাতে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি জাজিরা থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ছিলেন। সংবাদর্মীদের মধ্যে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন ছিলেন। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। আশা করছি, জাতির বিবেক সংবাদকর্মীরা এই মুহুর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, যতদূর জেনেছি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। উপ্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে থাকলেও আমরা জেলার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ কোনো অন্যায় করে থাকলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি সংবাদকর্মী ও পুলিশ উভয় উভয়কে নিরাপত্তা প্রদানের অনুরোধ করছি।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুকুটিয়ায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত-৫

জাজিরা থানার ওসির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা : পিস্তল বের করে হত্যার হুমকি

আপডেট সময় ০৩:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪
শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৮-আগস্ট) দুপুর অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে জাজিরা থানার সামনে এই ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে চলমান পুলিশের কর্মবিরতির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন জাজিরা থানার পুলিশ সদস্যরা। কর্মসূচির সংবাদ প্রচারের জন্য স্থানীয় প্রেসক্লাব ও রিপোর্টাস ইউনিটিসহ অন্যান্য সংবাদকর্মীরা সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান।
এক পর্যায়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে তাদের ওপর হামলার হুকুম দেন পুলিশ সদস্যের। এরপর পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হওয়ার পাশাপাশি দৈনিক আমার সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি হিমেল আহমেদ অপি গুরুতর আহত হয়।
এসময় দৈনিক যায়যায়দিনের সাংবাদিক ইমরান হোসাইনকে পিস্তল বের হত্যার হুমকি প্রদান করেন ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সাংবাদিকরা সেখান থেকে জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদে চলে যান। গুরুতর আহত হিমেল আহমেদ অপিকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। অন্যদিকে ইমরানসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা নিরাপদে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বর্তমানে জাজিরার সাংবাদিকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এঘটনার সময় সাংবাদিক হিমেল আহমেদ অপি ফেসবুকে এক ভিডিওতে রক্তাক্ত অবস্থায় বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাংবাদিকরা পূর্ণ সমর্থন দিয়ে সংবাদ প্রচারণাসহ আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করায় আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করেছে।
হামলায় আহত সাংবাদিক ইমরান হোসাইন বলেন, আমরা উপজেলায় আইনশৃংখলা মিটিংয়ে ছিলাম। তখন শুনতে পারি জাজিরা থানা পুলিশ বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে নিউজ করার জন্য থানায় যাই। গিয়ে যানতে পারি ওসি আমাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য ও গালাগাল করছেন। বিষয়টি আমি ওসিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের চার পাঁচজন সাংবাদিক আহত হয়। আমি এই হামলার বিচার চাই।
অভিযুক্ত জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। এটার জন্য আমরা দুঃখিত এবং লজ্জিত।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানান।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শরীয়তপুরের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম বলেন, জাজিরাতে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি জাজিরা থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ছিলেন। সংবাদর্মীদের মধ্যে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন ছিলেন। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। আশা করছি, জাতির বিবেক সংবাদকর্মীরা এই মুহুর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, যতদূর জেনেছি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। উপ্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে থাকলেও আমরা জেলার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ কোনো অন্যায় করে থাকলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি সংবাদকর্মী ও পুলিশ উভয় উভয়কে নিরাপত্তা প্রদানের অনুরোধ করছি।