সেতুর অভাবে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নৌকা দিয়ে চলাচল করছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষ। উপজেলার ইকরকান্দি বাজার ও পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় কীর্তিনাশা নদী পারাপারে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে নৌকায় একমাত্র ভরসা ১০ হাজার মানুষের। ফেরাঙ্গীকান্দী, নাওডোবা, সিংজালা, নারায়ণপুর, ইকরকান্দি, সূর্য মনিসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকেন।
স্থানীয় ইকরকান্দি বাজারের পাশে রয়েছে ৫৬নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরানি মাদ্রাসা, ইকরকান্দি বাজার, নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়, নারায়ণপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এসব অফিসে সেবা নেওয়ার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। যোগাযোগের জন্য সড়ক থাকলেও সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
সরেজমিনে কীর্তিনাশা নদীর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন নদী পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছেন। অপরপ্রান্ত থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছোট নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
ইকরকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, আমার বয়স এখন ৬৫। ছোটবেলা থেকে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছি। স্কুল, মাদ্রাসা, ভূমি অফিস, পরিষদ, কমিটি ক্লিনিক, বাজারসহ সব প্রতিষ্ঠানে আসতে একমাত্র অবলম্বন নৌকা। ব্রিটিশ আমল থেকে এই নদীতে কোনো সেতু হয়নি। এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি। এতে সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন, ব্যবসা বৃদ্ধিসহ এলাকাবাসীর সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে।
নৌকার মাঝি ইকরকান্দি গ্রামের আজিজ মাদবর বলেন, ২ বছর ধরে আমি এখানে নৌকা চালান। ব্রিটিশ আমল থেকে এ ঘাটে খেয়া পারাপার হয়। নৌকা দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার লোক পারাপার হয়। আমি চাই, এখানে একটা সেতু হোক। আমি নৌকা না চালাতে পারলেও দুঃখ নেই। তবে সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মাদবর বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণে দাবি দীর্ঘদিনের। জনদুর্ভোগ এড়াতে নদীটির নারায়ণপুর ও ইকরকান্দি বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এখানে একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসী এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।
নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যোগাযোগের সমস্যার কারণে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অনেক সময় নদীতে স্রোত থাকে তখন বাচ্চারা স্কুলে আসতে চায় না। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় করে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ওই এলাকা থেকে ভেদরগঞ্জ বাজার ঘুরে স্কুলে আসতে বাচ্চাদের অনেক সময় লাগে।
তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। ওই স্থানে সেতুর জন্য প্রস্তাব দেওয়া থাকলে তার অগ্রগতির বিষয়ে কাজ করা হবে। যদি প্রস্তাব না দেওয়া থাকে, তাহলে নতুন প্রকল্পে সেতুটি অন্তর্ভুক্ত করে খুব শিগগির কাজ শুরু করা হবে।