ঢাকা ১১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ে আ.লীগের ফাঁদে বিএনপি

আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারদেশে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে চেয়ারম্যান- মেম্বারদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির একটি সভার ” পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল  চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে এই দাবির বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপির বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা হাঁটছেন উল্টো পথে। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের দাবি উঠেছে, সেখানে
অভিযোগ শোনা যাচ্ছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মুখেই। জানা গেছে, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ গঠিত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচন পক্রিয়ার বিরোধীতা করে প্রতিবাদ স্বরুপ অন্যান্য নির্বাচনগুলোর মত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। ফলে নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই অংশ গ্রহণ করেছে। এমনকি দলীয় এমপি এবং প্রভাবশালীদের সমর্থন বাগিয়ে নেয়া ব্যক্তিরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে চেয়ারম্যান বনে • গেছেন। সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রায় প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় লোক। তাদের মধ্যে অধিকাংশই উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন পদে আছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই নানা ভাবে নিজেদেরকে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে অন্যান্যদের মত সোনারগাঁয়ের ১০টি উপজেলার বিতর্কিত চেয়ারম্যানরাও জনরোষ এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে, নিজ নিজ ইউনিয়নে নিজেদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য ধরে রাখা সহ আওয়ামী লীগের শক্তি বহাল রাখতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করার গুঞ্জন চলছে সোনারগাঁয়ের ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে। কেননা, তারা গা ঢাকা দিলেও তাদের সেকেন্ড ম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের দোসরদেরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। ইউপি সদস্যদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভিন্ন পদে রয়েছেন কিংবা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক কর্মী অথবা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, বর্তমানে তাদেরকেই প্যানেল চেয়ারম্যান করার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
এদিকে, ইউপি সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা ও দোসরদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতা হয়েও তারা উভয়ে আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়েছেন।
সোনারগাঁয়ে বিএনপির একাংশের নেতারা বলছেন, ইতিমধ্যেই মোগরাপাড়া, সনমান্দি, পিরোজপুর ও জামপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান তথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই মান্নান ও মোশারফকে তুষ্ট করেই চেয়ারে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সাদিপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের দোসরদের মধ্যে যারা চেয়ারম্যান হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তারাও মান্নানের দরবারে ঢু মারছেন। যার নেপথ্যে রয়েছে মোটা অংকের টাকার খেলা।
এদিকে, বিএনপির নীতি নির্ধারকরা যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যানদের অপসারণের দাবি তুলেছে, সেখানে সোনারগাঁয়ে মান্নান মোশারফ আওয়ামী লীগের দোসরদেরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মান্নানপন্থি এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপির
কাঁধে ভর করে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের দোসররা পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার কৌশল এটেছে এবং সেই কৌশলে তারা সফলও হচ্ছে। যাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি কিংবা দলীয় চেয়ারম্যানদের দোসর হিসেবে পরিচিত। তাদের চেয়ারম্যান করার মধ্যদিয়ে কার্যত আওয়ামী লীগের দখলেই থেকে যাচ্ছে সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন। যা আগামীতে বিএনপির জন্যই বুমেরাং হবে। এখন বিএনপি নেতা মান্নান যেনে বুঝে আওয়ামী লীগের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে কিনা তা বোধগম্য হচ্ছে না।’
এদিকে, মান্নান-মোশারফকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের যেমন অভিযোগ পাচ্ছি তেমনি জোরপূর্বক মেম্বারদের থেকে সই আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারকে বলবো তারা যেন যাচাই-বাছাই করে এ সকল পদে নিয়োগ দেয়।’
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাঙ্গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আলিফ পরিবহন খাদে : আহত-৩০

সোনারগাঁয়ে আ.লীগের ফাঁদে বিএনপি

আপডেট সময় ০২:৩১:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারদেশে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে চেয়ারম্যান- মেম্বারদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির একটি সভার ” পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল  চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে এই দাবির বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপির বর্তমান দায়িত্বশীল নেতারা হাঁটছেন উল্টো পথে। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের দাবি উঠেছে, সেখানে
অভিযোগ শোনা যাচ্ছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মুখেই। জানা গেছে, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ গঠিত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচন পক্রিয়ার বিরোধীতা করে প্রতিবাদ স্বরুপ অন্যান্য নির্বাচনগুলোর মত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। ফলে নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই অংশ গ্রহণ করেছে। এমনকি দলীয় এমপি এবং প্রভাবশালীদের সমর্থন বাগিয়ে নেয়া ব্যক্তিরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে চেয়ারম্যান বনে • গেছেন। সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রায় প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় লোক। তাদের মধ্যে অধিকাংশই উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন পদে আছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই নানা ভাবে নিজেদেরকে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে অন্যান্যদের মত সোনারগাঁয়ের ১০টি উপজেলার বিতর্কিত চেয়ারম্যানরাও জনরোষ এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে, নিজ নিজ ইউনিয়নে নিজেদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য ধরে রাখা সহ আওয়ামী লীগের শক্তি বহাল রাখতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করার গুঞ্জন চলছে সোনারগাঁয়ের ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে। কেননা, তারা গা ঢাকা দিলেও তাদের সেকেন্ড ম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের দোসরদেরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। ইউপি সদস্যদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভিন্ন পদে রয়েছেন কিংবা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক কর্মী অথবা আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, বর্তমানে তাদেরকেই প্যানেল চেয়ারম্যান করার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
এদিকে, ইউপি সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা ও দোসরদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতা হয়েও তারা উভয়ে আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়েছেন।
সোনারগাঁয়ে বিএনপির একাংশের নেতারা বলছেন, ইতিমধ্যেই মোগরাপাড়া, সনমান্দি, পিরোজপুর ও জামপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান তথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই মান্নান ও মোশারফকে তুষ্ট করেই চেয়ারে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সাদিপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের দোসরদের মধ্যে যারা চেয়ারম্যান হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তারাও মান্নানের দরবারে ঢু মারছেন। যার নেপথ্যে রয়েছে মোটা অংকের টাকার খেলা।
এদিকে, বিএনপির নীতি নির্ধারকরা যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যানদের অপসারণের দাবি তুলেছে, সেখানে সোনারগাঁয়ে মান্নান মোশারফ আওয়ামী লীগের দোসরদেরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার নেপথ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মান্নানপন্থি এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপির
কাঁধে ভর করে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের দোসররা পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার কৌশল এটেছে এবং সেই কৌশলে তারা সফলও হচ্ছে। যাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি কিংবা দলীয় চেয়ারম্যানদের দোসর হিসেবে পরিচিত। তাদের চেয়ারম্যান করার মধ্যদিয়ে কার্যত আওয়ামী লীগের দখলেই থেকে যাচ্ছে সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন। যা আগামীতে বিএনপির জন্যই বুমেরাং হবে। এখন বিএনপি নেতা মান্নান যেনে বুঝে আওয়ামী লীগের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে কিনা তা বোধগম্য হচ্ছে না।’
এদিকে, মান্নান-মোশারফকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের যেমন অভিযোগ পাচ্ছি তেমনি জোরপূর্বক মেম্বারদের থেকে সই আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারকে বলবো তারা যেন যাচাই-বাছাই করে এ সকল পদে নিয়োগ দেয়।’