পদ্মানদীতে মাছ ধরার জন্য রাতদিন নৌকা ও জাল নিয়ে নদী চষে বেড়াচ্ছেন জেলেরা। অন্তত কিছু মাছ পেয়ে বিক্রি করে যেন সংসারের খরচ চালানো যায়। কিন্তু কেউ কেউ দিনভর জাল ফেললেও মিলছে না মাছের দেখা। এর মধ্যেই অনাকাঙ্খিত রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ভয়ে নদীতে নামছেন অনেক জেলে। ফলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী জেলে পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ অবস্থা। এ পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীর নাব্য কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন মৎস্য কর্মকর্তা।
শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া, ভাগ্যকুল ও লৌহজং উপজেলার জশলদিয়া,কান্দিপাড়া, কুমারভোগ পয়েন্টে প্রতিদিনই জেলেরা দিনরাত নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে চষে বেড়ালেও মাছের দেখা মিলছে না। পদ্মাতীরবর্তী বাঘড়া ইউনিয়নের বাঘড়া বাজারে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়। জেলেরা পদ্মানদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক পরিবার।
ভাগ্যকুল এলাকার জেলে কোরবান বলেন, আমরা প্রতিদিনই নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করতে যাই। কোনো দিন কেউ কিছু পান, আবার কেউ একেবারে মাছ না পেয়ে ফিরে আসি। নদীতে মাছের অভাবে এলাকার আমাদের না খেয়ে মরার অবস্থা।
বাঘড়া এলাকার জেলে জুলহাস বলেন, আমরা সারা রাত নদীতে পড়ে থেকে কেউ এক পোয়া, কেউবা আধা কেজি মাছ নিয়ে সকালে বাড়ি আসি। এ মাছ বেঁচে সংসারের অন্য খরচ চালানো আমাদের কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বেশকিছুদিন ধরে আমরা এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সরকারি তেমন কোনো সহায়তা আমরা পাই না।
জেলে জসিম বলেন, পদ্মায় একেবারেই মাছ নাই। গত কয়েক দিন ধরে দিনরাত জাল ফেলে পাঁচ ‘শ টাকার মাছও পাইনি। এর মধ্যে আবার রাসেল ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে মধ্যেচরের ৪ জেলে সাপের কাপড়ে মারা গেছে এবং আরো দুই জন চিকিৎসা নিয়ে ভালো হইছে। কিন্তু তাদের পা ফুলে গেছে। সাপের ভয়ে আমাদের অনেক জেলে নদীতে নামছে না।
এব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক বলেন, নদীর তলদেশে পলি পড়ে যাওয়া মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া জেলায় আগের চেয়ে জেলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ১শত জন মিলে যে মাছ পেতেন, এখন দেড়শত জন মিলে সেই মাছ শিকার করছেন। এখানে তো কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জেলে পরিবারদের জন্য যতটুকু সরকারী অনুদান আসছে আমরা ততটুকু তাদেরকে দিয়ে সহযোগীতা করে আসছি।