ঢাকা ১২:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৭ বছর পর ফরিদপুরে পৈত্রিক জমি ফিরে পেতে চান আলী খান

ভাইদের দ্বন্দ ও রেষারেষিতে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ গ্রাম থেকে অন্যত্র বসবাস করছেন আলী হোসেন খান (৫২)। এই সুযোগে দখল হারিয়েছেনও পৈত্রিক সম্পত্তির। দীর্ঘদিন পর সেই জমি বুঝে পেতে হন্যে হয়ে উঠেছেন তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্ত হলেও সীমান্ত জটিলতা বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে তার। দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাসে এগিয়ে আসছে না স্থানীয় প্রশাসনও, এমনই অভিযোগ তার।
আলী হোসেন খান ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন খানের পুত্র। সে ৪ ভাই ও ৯ বোনের মধ্যে সকলের ছোট। বোনরা এবং মায়ের সম্পত্তির অংশ তাকে হস্তান্তর করলে বিপাকে পড়েন তিনি, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে অন্য তিন ভাই। সেই বিবাদে প্রায় ২০ বছর আগে পরিবার নিয়ে ফরিদপুর শহরে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় বসবাস করছেন। এই সুযোগে তার পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো দখলে নেন অন্য ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা।
তার অভিযোগ, নিজ গ্রামের পাশ্ববর্তী একই উপজেলার কামারখালী বাজারের তিন শতাংশ জমি ও জমিতে নির্মিত দোকানঘর দখল করে রেখেছেন চাচাতো ভাই তকন খান ও মৃত মুন্নু খানের পুত্র নাঈম খান। ওই জমি তিনি হেবা দলিলমূলে মালিকানা লাভ করেন। পরবর্তীতে নাঈম খানকে ভাড়া দেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতে নিজেদের জমি দাবি করে বসে নাঈম খান।
এরপর গত দুই বছর আগে
দোকানঘরটি স্থানীয় সমীর বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দেন দখলকারীরা।
এছাড়া পাশ্ববর্তী দুই শতাংশ জমিও দখল করে রেখেছেন তারা। এই দুই শতাংশ তার মায়ের নিকট থেকে হেবা দলিলমূলে মালিকানা প্রাপ্ত হোন।
তবে অভিযোগ গুলো অস্বীকার করেন তকন খান। তিনি জানান, আলী হোসেন খানের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। তার কোনো সম্পত্তি আমরা দখল করিনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই জমি উচ্ছেদ পূর্বক বুঝে পেতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন তিনি। পরবর্তীতে তা চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল এক স্মারক পত্রের মাধ্যমে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ওই জমিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রসঙ্গে সরেজমিন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর দীপজন মিত্র। কিন্তু ওই জমি উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্যক্তিমালিকানা জমি ব্যক্তির দখল বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়ার আইন নেই বলে দুই জেলার প্রশাসন জানিয়েছেন।
জানা যায়, কামারখালী বাজারটি ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী ও খুলনা বিভাগে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। সম্প্রতি ওই বাজারের অধিকাংশ জমি শ্রীপুর উপজেলার রাজধরপুর মৌজার রেকর্ডভূক্ত হয়। বদলে যায় প্রশাসনিক কাঠামো। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা ভোটার হিসেবে ডুমাইন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি।
ভুক্তভোগী আলী হোসেন খান বলেন, আমার জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় আমি মধুখালীর ইউএনও’র নিকট গেলে তিনি আমাকে জানান, এটা শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন দেখবে। পরবর্তীতে কিছুদিন আগে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে সে আমাকে জানিয়ে দেন এটি মধুখালী উপজেলা প্রশাসন দেখবে এবং মাগুরা জেলা প্রশাসনের রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট যেতে বলেন। এরপর তার কাছে গেলেও একই কথা বলে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু আমি আইনগত কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। অপরদিকে দখলদারীরা আমাকে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনিক জানান, যে জমিটি নিয়ে দখল সমস্যা রয়েছে সেটি আমাদের প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাসের মধ্যে নেই। যে কারনে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানা জমি ব্যক্তি কর্তৃক দখল মুক্ত বিষয়ে আমাদের আইন নেই।
তিনি আরও বলেন, জায়গাটি সম্পূর্ণ অন্য বিভাগের আওতাধীন। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। এটির সমাধানে শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
বিষয়টি নিয়ে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মাহাবুবুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে লোকটি আমাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু জমি সংক্রান্ত ব্যক্তি বিরোধে আমাদের কিছু করার নিয়ম নেই। এছাড়া ওই জমি মাগুরা জেলার রেকর্ডভূক্ত হলে সেটি নিয়ে ব্যক্তি মালিকানা বিরোধ ব্যতিত সকল বিষয়ে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবশ্যই দেখবে।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুকুটিয়ায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত-৫

১৭ বছর পর ফরিদপুরে পৈত্রিক জমি ফিরে পেতে চান আলী খান

আপডেট সময় ১২:৫৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
ভাইদের দ্বন্দ ও রেষারেষিতে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ গ্রাম থেকে অন্যত্র বসবাস করছেন আলী হোসেন খান (৫২)। এই সুযোগে দখল হারিয়েছেনও পৈত্রিক সম্পত্তির। দীর্ঘদিন পর সেই জমি বুঝে পেতে হন্যে হয়ে উঠেছেন তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্ত হলেও সীমান্ত জটিলতা বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে তার। দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাসে এগিয়ে আসছে না স্থানীয় প্রশাসনও, এমনই অভিযোগ তার।
আলী হোসেন খান ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন খানের পুত্র। সে ৪ ভাই ও ৯ বোনের মধ্যে সকলের ছোট। বোনরা এবং মায়ের সম্পত্তির অংশ তাকে হস্তান্তর করলে বিপাকে পড়েন তিনি, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে অন্য তিন ভাই। সেই বিবাদে প্রায় ২০ বছর আগে পরিবার নিয়ে ফরিদপুর শহরে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তিনি চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় বসবাস করছেন। এই সুযোগে তার পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো দখলে নেন অন্য ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা।
তার অভিযোগ, নিজ গ্রামের পাশ্ববর্তী একই উপজেলার কামারখালী বাজারের তিন শতাংশ জমি ও জমিতে নির্মিত দোকানঘর দখল করে রেখেছেন চাচাতো ভাই তকন খান ও মৃত মুন্নু খানের পুত্র নাঈম খান। ওই জমি তিনি হেবা দলিলমূলে মালিকানা লাভ করেন। পরবর্তীতে নাঈম খানকে ভাড়া দেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতে নিজেদের জমি দাবি করে বসে নাঈম খান।
এরপর গত দুই বছর আগে
দোকানঘরটি স্থানীয় সমীর বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দেন দখলকারীরা।
এছাড়া পাশ্ববর্তী দুই শতাংশ জমিও দখল করে রেখেছেন তারা। এই দুই শতাংশ তার মায়ের নিকট থেকে হেবা দলিলমূলে মালিকানা প্রাপ্ত হোন।
তবে অভিযোগ গুলো অস্বীকার করেন তকন খান। তিনি জানান, আলী হোসেন খানের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। তার কোনো সম্পত্তি আমরা দখল করিনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই জমি উচ্ছেদ পূর্বক বুঝে পেতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন তিনি। পরবর্তীতে তা চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল এক স্মারক পত্রের মাধ্যমে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ওই জমিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ প্রসঙ্গে সরেজমিন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর দীপজন মিত্র। কিন্তু ওই জমি উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্যক্তিমালিকানা জমি ব্যক্তির দখল বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়ার আইন নেই বলে দুই জেলার প্রশাসন জানিয়েছেন।
জানা যায়, কামারখালী বাজারটি ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী ও খুলনা বিভাগে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। সম্প্রতি ওই বাজারের অধিকাংশ জমি শ্রীপুর উপজেলার রাজধরপুর মৌজার রেকর্ডভূক্ত হয়। বদলে যায় প্রশাসনিক কাঠামো। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা ভোটার হিসেবে ডুমাইন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি।
ভুক্তভোগী আলী হোসেন খান বলেন, আমার জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় আমি মধুখালীর ইউএনও’র নিকট গেলে তিনি আমাকে জানান, এটা শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন দেখবে। পরবর্তীতে কিছুদিন আগে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে সে আমাকে জানিয়ে দেন এটি মধুখালী উপজেলা প্রশাসন দেখবে এবং মাগুরা জেলা প্রশাসনের রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট যেতে বলেন। এরপর তার কাছে গেলেও একই কথা বলে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু আমি আইনগত কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। অপরদিকে দখলদারীরা আমাকে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনিক জানান, যে জমিটি নিয়ে দখল সমস্যা রয়েছে সেটি আমাদের প্রশাসনিক কাঠামো বিন্যাসের মধ্যে নেই। যে কারনে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানা জমি ব্যক্তি কর্তৃক দখল মুক্ত বিষয়ে আমাদের আইন নেই।
তিনি আরও বলেন, জায়গাটি সম্পূর্ণ অন্য বিভাগের আওতাধীন। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। এটির সমাধানে শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
বিষয়টি নিয়ে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মাহাবুবুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে লোকটি আমাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু জমি সংক্রান্ত ব্যক্তি বিরোধে আমাদের কিছু করার নিয়ম নেই। এছাড়া ওই জমি মাগুরা জেলার রেকর্ডভূক্ত হলে সেটি নিয়ে ব্যক্তি মালিকানা বিরোধ ব্যতিত সকল বিষয়ে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবশ্যই দেখবে।