ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরের গোসাঁইরহাটে মেলা নিয়ে প্রশাসনের নয়ছয়, বৃক্ষমেলার নামে চলছে তামাসা

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে চলছে দশদিন ব্যাপী বন বিভাগের বৃক্ষমেলা। অথচ কিছুই জানেন না শরীয়তপুরের বন বিভাগ। তবে বৃক্ষমেলার মাঠ জুড়ে ফুসকা-চটপটিসহ কসমেটিকস, প্রসাধনীর দোকান। আর এক কোণে পড়ে রয়েছে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান। এমন মেলাকে কেউ বলছেন গাছের সঙ্গে তামাসা, আবার কেউ বলছেন বৈশাখী মেলা বা বাণিজ্য মেলা। বৃক্ষমেলার মূল ফটকে মেলার আয়োজক বন বিভাগ লেখা থাকলেও বন বিভাগ জানিয়েছে তারা কোনো মেলার আয়োজন করেনি। এমন বৃক্ষমেলার সার্বিক সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসন করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল এই মেলাকে বৃক্ষমেলা হিসেবে মানতে নারাজ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) এমন একটি বৃক্ষ মেলা দেখা গেছে, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে।
জানা যায়, গোসাইরহাটে বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে ‘আজকের গাছ আগামি দিনের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানকে সামনে রেখে বৃক্ষমেলার আয়োজন হবে, এমন সংবাদকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিল উপজেলাবাসী। কিন্তু পহেলা জুলাই থেকে শুরু হওয়া দশদিন ব্যাপী বৃক্ষমেলার বাস্তব চিত্র দেখে গাছের চারা রোপণে আশাহত হয়েছেন উপজেলাবাসী।
মেলার ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় সর্বমোট দোকান বসেছে ৩৯ টি। এরমধ্যে ৩৮ টি দোকানই বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনার বিভিন্ন রাইড দিয়ে সাজানো। মেলার এক কোণে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারী নামে একটি গাছের চারা বিক্রির দোকান। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাছের চারা বিক্রির ওই দোকানটি ছাড়া বাকি সকল দোকানেই ভীর করতে দেখা গেছে। বৃক্ষমেলায় গাছের চারা বিক্রির ওই দোকানটিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার বিক্রি হলেও মেলার মাঠের প্রধান অংশসহ পুরো জায়গা জুড়ে ফুসকা, চটপটি, আঁচার, কসমেটিকস, প্রসাধনী, দা-বটির দোকানসমূহের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের গড় বিক্রি প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বৃক্ষমেলায় আসা দোকান মালিকদের কোনো ভাড়া দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে দোকানদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন প্রতিদিন ১ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি ভাড়া দিতে হবে আয়োজক কমিটিকে।
এমন বৃক্ষমেলার প্রধান ফটকে আয়োজক বন বিভাগ শরীয়তপুরের নাম লেখা থাকলেও গোসাইরহাটে এমন কোনো বৃক্ষমেলা বন বিভাগ আয়োজন করেনি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসন বলছে মেলাটির আয়োজক বন বিভাগ, সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই মেলা দিয়ে উপজেলায় বৃক্ষরোপণের কোনো উপকার হবে না। বরং মানুষ গাছের চারা রোপণ করার জন্য যে টাকা বরাদ্ধ রেখেছিল, সেই টাকায় বৃক্ষমেলা থেকে কসমেটিকস, প্রসাধনী কিনে আঁচার-ফুসকা খেয়ে বাড়ি যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, দশদিন ব্যাপী এই মেলায় বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে মেলা আয়োজক কমিটিকে। বিক্রি না হলে দশদিনে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তেমন লাভ হবে না আমাদের।
শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। শিশুদের বিনোদনের এই দোকানটির কর্মচারী ফজল বলেন, আমি প্রতিটি টিকেট ৪০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রয় হয়। ভাড়ার বিষয়টি মালিক পক্ষ জানে, আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না।
মেলার একমাত্র নার্সারীর দোকান কর্মচারী রবিউল বলেন, আগের মতো মানুষ এখন আর গাছ কিনে না। দোকানে এসে মানুষ গাছের নাম ও দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। অধিকাংশ মানুষ মেলার নৌকা ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করে, গাছ কিনে না। তবে কেউ কেউ এসে গাছ কিনে। গাছের প্রতি মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। আজ শুক্রবার তেমন বিক্রি হয়নি। গতকাল পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।
নার্সারিটির মালিক মো. মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার মূল নার্সারী মাদারীপুরে। তবে একটি বাগান শরীয়তপুরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকায়ও রয়েছে। বৃক্ষমেলায় একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান, বিষয়টি তেমন ভালো দেখায় না। অন্যান্যদেরও আসতে বলা হয়েছিল, তবে তারা আসেননি।
মাহমুদা নামে একজন কসমেটিকসের দোকানে কেনাকাটা করছিলেন, এমন সময় তার সঙ্গে কথা হয় তার প্রশ্ন, মেলায় গাছের চারার দোকান আছে? থাকলে দোকানটি কই? তাকে দোকানটি দেখিয়ে দিলে তিনি বলেন, এটা কখনো বৃক্ষমেলা হতে পারে না।
বৃক্ষ মেলা উপলক্ষ্যে মেলায় এসেছেন মো. মনির হোসাইন। তিনি বলেন, আমি গতকালকেও মেলায় এসেছিলাম। আমার কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর মনে হয়েছে। মনে করেছিলাম অনেক ধরণের গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু এসে দেখলাম তেমন গাছ নেই। কেনার মতো কোনো গাছ পাইনি। মনে হয় বাণিজ্য মেলায় এসেছি। এই মেলাটি তরুণ প্রজন্মের জন্য বা উপজেলাবাসীর জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, বৃক্ষমেলায় বৃক্ষ নেই।
হুমায়ুন শিকদার গোসাইরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলেন, বৃক্ষমেলাটি কী বৃক্ষমেলায় রূপান্তর হলো নাকি আনন্দ মেলায় রূপান্তর হলো? এ প্রশ্ন আমার। আসলে যে উদ্দেশ্যে এখানে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এটা নামে মাত্র বৃক্ষ মেলা বলেই আমি মনে করি। মেলার মাঠ ঘুরে আমি যা দেখলাম, এটা কখনো বৃক্ষ মেলা হতে পারে না। বৃক্ষমেলা যেন, বৃক্ষ মেলাই হয়, এই দাবি রাখছি।
গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ এই কারণে যে এমন একটি বিষয় নিয়ে আপনি লিখতে যাচ্ছেন। আমি গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছি। আমার শেষ অফিসের দিন দেখেছি, ইউএনও মহোদয় মাঠে মেলার জন্য দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কিসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারীর দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা! বিষয়টি গোসাইরহাট উপজেলাবাসীর জন্য লজ্জ্বাসহ দুঃখজনক। এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।
বৃক্ষমেলার বিষয়ে কিছুই জানেন না নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন বাবলু মৃধা। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। মেলা কোথায় হচ্ছে, কীসের মেলা হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। হয়ত আমার চেয়ারম্যান অথবা সাবেক জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানেন।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, মূল ফটকে কী লেখা রয়েছে তা আমি জানি না। গোসাইরহাটে মেলা করার জন্য বন বিভাগের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো আয়োজনও বন বিভাগ করেনি। নার্সারী মালিক সমিতির আবেদনের পরে একদিন মিটিংয়ে জেলা প্রশাসন বলেছিল উপজেলা প্রর্যায়ে বৃক্ষমেলা মেলার আয়োজন করার জন্য। তবে আমাদের বরাদ্দ নেই বলে আমরা জানিয়েছিলাম। গোসাইরহাটের বৃক্ষমেলাটির আয়োজন হয়ত উপজেলা প্রশাসন করেছে। আয়োজকের স্থলে বন বিভাগের নাম তারা হয়ত ভুলে লিখেছে। বৃক্ষমেলার নামে ৩৯ টি দোকানের মধ্যে একটি মাত্র দোকান গাছের চারা বিক্রি করার, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, এই বিষয়টির ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না, আপনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন।
বৃক্ষমেলা নিয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কীসের ভাড়া? উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি আর কোনো প্রশ্ন শুনতে বা বক্তব্য দিতে রাজি হোননি।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারীপুর থেকে চুরি হওয়া গরু ফরিদপুরে জনতার হাতে চোর সহ আটক

শরীয়তপুরের গোসাঁইরহাটে মেলা নিয়ে প্রশাসনের নয়ছয়, বৃক্ষমেলার নামে চলছে তামাসা

আপডেট সময় ০১:০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে চলছে দশদিন ব্যাপী বন বিভাগের বৃক্ষমেলা। অথচ কিছুই জানেন না শরীয়তপুরের বন বিভাগ। তবে বৃক্ষমেলার মাঠ জুড়ে ফুসকা-চটপটিসহ কসমেটিকস, প্রসাধনীর দোকান। আর এক কোণে পড়ে রয়েছে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান। এমন মেলাকে কেউ বলছেন গাছের সঙ্গে তামাসা, আবার কেউ বলছেন বৈশাখী মেলা বা বাণিজ্য মেলা। বৃক্ষমেলার মূল ফটকে মেলার আয়োজক বন বিভাগ লেখা থাকলেও বন বিভাগ জানিয়েছে তারা কোনো মেলার আয়োজন করেনি। এমন বৃক্ষমেলার সার্বিক সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসন করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল এই মেলাকে বৃক্ষমেলা হিসেবে মানতে নারাজ।
শুক্রবার (৫ জুলাই) এমন একটি বৃক্ষ মেলা দেখা গেছে, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে।
জানা যায়, গোসাইরহাটে বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে ‘আজকের গাছ আগামি দিনের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানকে সামনে রেখে বৃক্ষমেলার আয়োজন হবে, এমন সংবাদকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিল উপজেলাবাসী। কিন্তু পহেলা জুলাই থেকে শুরু হওয়া দশদিন ব্যাপী বৃক্ষমেলার বাস্তব চিত্র দেখে গাছের চারা রোপণে আশাহত হয়েছেন উপজেলাবাসী।
মেলার ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় সর্বমোট দোকান বসেছে ৩৯ টি। এরমধ্যে ৩৮ টি দোকানই বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনার বিভিন্ন রাইড দিয়ে সাজানো। মেলার এক কোণে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারী নামে একটি গাছের চারা বিক্রির দোকান। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাছের চারা বিক্রির ওই দোকানটি ছাড়া বাকি সকল দোকানেই ভীর করতে দেখা গেছে। বৃক্ষমেলায় গাছের চারা বিক্রির ওই দোকানটিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার বিক্রি হলেও মেলার মাঠের প্রধান অংশসহ পুরো জায়গা জুড়ে ফুসকা, চটপটি, আঁচার, কসমেটিকস, প্রসাধনী, দা-বটির দোকানসমূহের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের গড় বিক্রি প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বৃক্ষমেলায় আসা দোকান মালিকদের কোনো ভাড়া দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে দোকানদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন প্রতিদিন ১ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি ভাড়া দিতে হবে আয়োজক কমিটিকে।
এমন বৃক্ষমেলার প্রধান ফটকে আয়োজক বন বিভাগ শরীয়তপুরের নাম লেখা থাকলেও গোসাইরহাটে এমন কোনো বৃক্ষমেলা বন বিভাগ আয়োজন করেনি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসন বলছে মেলাটির আয়োজক বন বিভাগ, সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই মেলা দিয়ে উপজেলায় বৃক্ষরোপণের কোনো উপকার হবে না। বরং মানুষ গাছের চারা রোপণ করার জন্য যে টাকা বরাদ্ধ রেখেছিল, সেই টাকায় বৃক্ষমেলা থেকে কসমেটিকস, প্রসাধনী কিনে আঁচার-ফুসকা খেয়ে বাড়ি যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, দশদিন ব্যাপী এই মেলায় বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে মেলা আয়োজক কমিটিকে। বিক্রি না হলে দশদিনে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তেমন লাভ হবে না আমাদের।
শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। শিশুদের বিনোদনের এই দোকানটির কর্মচারী ফজল বলেন, আমি প্রতিটি টিকেট ৪০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রয় হয়। ভাড়ার বিষয়টি মালিক পক্ষ জানে, আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না।
মেলার একমাত্র নার্সারীর দোকান কর্মচারী রবিউল বলেন, আগের মতো মানুষ এখন আর গাছ কিনে না। দোকানে এসে মানুষ গাছের নাম ও দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। অধিকাংশ মানুষ মেলার নৌকা ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করে, গাছ কিনে না। তবে কেউ কেউ এসে গাছ কিনে। গাছের প্রতি মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। আজ শুক্রবার তেমন বিক্রি হয়নি। গতকাল পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।
নার্সারিটির মালিক মো. মান্নান হাওলাদার বলেন, আমার মূল নার্সারী মাদারীপুরে। তবে একটি বাগান শরীয়তপুরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকায়ও রয়েছে। বৃক্ষমেলায় একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান, বিষয়টি তেমন ভালো দেখায় না। অন্যান্যদেরও আসতে বলা হয়েছিল, তবে তারা আসেননি।
মাহমুদা নামে একজন কসমেটিকসের দোকানে কেনাকাটা করছিলেন, এমন সময় তার সঙ্গে কথা হয় তার প্রশ্ন, মেলায় গাছের চারার দোকান আছে? থাকলে দোকানটি কই? তাকে দোকানটি দেখিয়ে দিলে তিনি বলেন, এটা কখনো বৃক্ষমেলা হতে পারে না।
বৃক্ষ মেলা উপলক্ষ্যে মেলায় এসেছেন মো. মনির হোসাইন। তিনি বলেন, আমি গতকালকেও মেলায় এসেছিলাম। আমার কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর মনে হয়েছে। মনে করেছিলাম অনেক ধরণের গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু এসে দেখলাম তেমন গাছ নেই। কেনার মতো কোনো গাছ পাইনি। মনে হয় বাণিজ্য মেলায় এসেছি। এই মেলাটি তরুণ প্রজন্মের জন্য বা উপজেলাবাসীর জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, বৃক্ষমেলায় বৃক্ষ নেই।
হুমায়ুন শিকদার গোসাইরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলেন, বৃক্ষমেলাটি কী বৃক্ষমেলায় রূপান্তর হলো নাকি আনন্দ মেলায় রূপান্তর হলো? এ প্রশ্ন আমার। আসলে যে উদ্দেশ্যে এখানে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এটা নামে মাত্র বৃক্ষ মেলা বলেই আমি মনে করি। মেলার মাঠ ঘুরে আমি যা দেখলাম, এটা কখনো বৃক্ষ মেলা হতে পারে না। বৃক্ষমেলা যেন, বৃক্ষ মেলাই হয়, এই দাবি রাখছি।
গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ এই কারণে যে এমন একটি বিষয় নিয়ে আপনি লিখতে যাচ্ছেন। আমি গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছি। আমার শেষ অফিসের দিন দেখেছি, ইউএনও মহোদয় মাঠে মেলার জন্য দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কিসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারীর দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা! বিষয়টি গোসাইরহাট উপজেলাবাসীর জন্য লজ্জ্বাসহ দুঃখজনক। এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।
বৃক্ষমেলার বিষয়ে কিছুই জানেন না নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন বাবলু মৃধা। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। মেলা কোথায় হচ্ছে, কীসের মেলা হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। হয়ত আমার চেয়ারম্যান অথবা সাবেক জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানেন।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, মূল ফটকে কী লেখা রয়েছে তা আমি জানি না। গোসাইরহাটে মেলা করার জন্য বন বিভাগের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো আয়োজনও বন বিভাগ করেনি। নার্সারী মালিক সমিতির আবেদনের পরে একদিন মিটিংয়ে জেলা প্রশাসন বলেছিল উপজেলা প্রর্যায়ে বৃক্ষমেলা মেলার আয়োজন করার জন্য। তবে আমাদের বরাদ্দ নেই বলে আমরা জানিয়েছিলাম। গোসাইরহাটের বৃক্ষমেলাটির আয়োজন হয়ত উপজেলা প্রশাসন করেছে। আয়োজকের স্থলে বন বিভাগের নাম তারা হয়ত ভুলে লিখেছে। বৃক্ষমেলার নামে ৩৯ টি দোকানের মধ্যে একটি মাত্র দোকান গাছের চারা বিক্রি করার, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, এই বিষয়টির ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না, আপনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন।
বৃক্ষমেলা নিয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কীসের ভাড়া? উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি আর কোনো প্রশ্ন শুনতে বা বক্তব্য দিতে রাজি হোননি।