পদ্মাসেতুর উত্তরে স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয়ার প্রতিবাদ করায় প্রাণ গেল স্বামীর

এমএ কাইয়ুম মাইজভান্ডারি (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
পদ্মাসেতু উত্তর থানা এলাকায় স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয়ার প্রতিবাদ করায় প্রাণ গেল স্বামী কাজল শেখ(৪৫) এর।
গত শুক্রবার(২ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে পদ্মাসেতু উত্তর থানার মেদেনী মন্ডল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেদেনী মন্ডল প্রজেক্টে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের স্ত্রী রিনা বেগমসহ স্থানীয়রা আহত স্বামী কাজল শেখ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে রেফার্ড করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ হাসপাতালে রবিবার রাত ১১ টার দিকে কাজল মৃত্যূবরণ করেন। কাজলের ময়না তদন্ত শেষে লাশ সোমবার নিজ বাড়ীতে এনে দাফন করা হয়। নিহত কাজল শেখ মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের যশলদিয়া গ্রামের মৃত তমিজউদ্দিন সুকানীর ছেলে। এব্যাপারে নিহতের স্ত্রী রিনা বেগম বাদী হয়ে খোকন ওরফে মুরগী খোকন গং দের বিরুদ্ধে
পদ্মাসেতু উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয়রা জানান, নিহত কাজল শেখ(৪৫) ও মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কান্দিপাড়া এলাকার মালেকের ছেলে খোকন ওরফে মুরগী খোকন(৪৫) উভয়ে তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে যশলদিয়া প্রজেক্টের ১নং রোডে আমজাদ এর বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। গত ৬ মাস যাবৎ মুরগী খোকন
অনৈতিকভাবে নিহত কাজলের  স্ত্রী রিনা বেগম(২৫)কে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রিনা বেগম রাজি না হওয়ায় তাকে না ভাবে উতক্ত করতে থাকে মুরগী খোকন। বিষয়টি রিনা বেগম তার স্বামী কাজলকে জানালে, স্বামী কাজল একাধিকবার মুরগী খোকনকে তার স্ত্রীকে উতক্ত করতে নিষেধ করায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ঘটনা দিন শুক্রবার সন্ধ্যার পরে এই নিয়ে কাজলের সাথে খোকনের ভাড়াটিয়া বাড়ীতে তর্কবিতর্ক হয়।
ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কাজলের স্ত্রী ফজরের নামাজ শেষে ঘর থেকে বের হলে মুরগী খোকন রিনার হাত ধরে টান দিলে রিনা ডাক চিৎকার দেয়। এসময় কাজল স্ত্রীর ডাক চিৎকারে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে মুরগী খোকনসহ তার সহযোগী একই এলাকার সুবা হাওলাদারের ছেলে আব্বাস(৫৫), সামাদের ছেলে স্বপন(৩০), শহিদ(৩৫), আদম খার ছেলে তৈয়ব আলী, খোকনের ছেলে রিফাত, রিসান, অসি, আলাই মাদবরের ছেলে আলামিন, হবির ছেলে বাবুল, বিপ্লবের ছেলে ইমনসহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন কাজলের উপর ইট, পাটকেল, লাঠি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। রিনা তার স্বামীকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসলে তাকেও ইট দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুত্বর জখম করা হয়।
স্ত্রী রিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, একই বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকার সুবাদে ৬ মাস ধরে মুরগী খোকন আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমি এই বিষয়ে আমার স্বামীকে জানালে কয়েক দফায় আমার স্বামী প্রতিবাদ করেন, ওই দিন খোকন ভোরে আমার হাত ধরে টানাটানি করতে থাকলে আমার স্বামী বাধা দিতে চাইলে খোকনসহ আব্বাস,স্বপন, শহিদ, তৈয়ব আলী, রিফাত, রিসজন, অসি, বাবুল, আলামিন, ইমনসহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আমার স্বামীর উপর হামলা করেন, খোকন ইট দিয়ে আমার স্বামীর বুকে পিঠে আঘাত করে। অন্যরা ইট লাঠি আঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। আমি আগাইয়া গেলে আমাকে ইট দিয়ে আঘাত করে। আমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে খোকনগং চলে যায়। পরে স্থানীয় শাহ-আলম আদুর সাহায্যে আমার স্বামীকে ষোলঘর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য ডাঃ আমার স্বামীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঐ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার স্বামী রবিবার রাতে মারা যায়।
যশলদিয়া প্রজেক্টের সভাপতি সুজল খান জানান, আমি পড়ে ঘটনা শুনি। যে মুরগী খোকন তার লোকজন নিয়ে কাজলকে মারধর করেছে।
মেদেনীমন্ডল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্কাস বলেন, নিহত কাজল আমার প্রতিবেশী ভাতিজা সম্পর্কের। ঐ দিন মারামারির ঘটনা শুনে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আহত কাজলকে হাসপাতালে পাঠাই। দুইদিন পর কাজল মারা যায়।
এব্যাপারে পদ্মাসেতু উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসাইন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।